তিনি জানান, সরকারি প্রকল্পের আওতায় আগামী বোরো মৌসুম থেকে কম্বাইন হারভেস্টার, রিপার ও রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মতো যন্ত্র কৃষকদের ৬০ শতাংশ ভর্তুকিতে সরবরাহ করা হবে।
এ প্রকল্পের জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ইতিমধ্যে রাজস্ব বাজেটের আওতায় ৫৬২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়ে একটি প্রস্তাবনা প্রণয়ন করেছে বলে সম্প্রতি ইউএনবির সাথে এক সাক্ষাতকারে উল্লেখ করেছেন কৃষিমন্ত্রী।
‘কৃষিশ্রমিক সংকটের কারণে ধান বা অন্যান্য ফসলের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। দেশে বিকল্প কর্মসংস্থান বেড়ে যাওয়ায় এ সংকট তৈরি হয়েছে। এখন কৃষক কাজের লোক পায় না, আর পেলেও অনেক মূল্য দিতে হয়। ফলে কৃষকের উৎপাদনে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এতে তারা বেশি লাভবান হচ্ছেন না। এ সংকট মোকাবিলায় কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ জরুরি হয়ে পড়েছে,’ বলেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, কৃষি ও খামার যান্ত্রিকীকরণ করার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে উৎপাদন ব্যয় হ্রাস ও ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা।
‘আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির সরবরাহ ও ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে ফসলের অপচয় রোধ এবং চাষাবাদে সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে,’ জানিয়ে আবদুর রাজ্জাক বলেন, সংশ্লিষ্ট প্রকল্পটির লক্ষ্য হলো কৃষিকে ব্যবসায়িকভাবে অধিকতর লাভজনক ও বাণিজ্যিকভাবে টেকসই করে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করা।
সারা দেশে কৃষকদের কী পরিমাণ ফসল কর্তন ও রোপন যন্ত্রের চাহিদা রয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, এ বিষয়ে সব জেলা ও উপজেলায় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে একটি জরিপ করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে জরিপে দেশের ৫৮টি জেলা থেকে কম্বাইন হারভেস্টার, রিপার ও রাইস ট্রন্সপ্লান্টারের যে চাহিদা পাওয়া গেছে সে অনুযায়ী যন্ত্র দেয়া হবে।
কৃষি যান্ত্রিকীকরণে কিছু বাধার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আগামী ৩-৪ বছর কৃষিযন্ত্র আমদানি করতে হবে। তবে দেশে কৃষি যান্ত্রপাতি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবা খুবই দুর্বল। সরবরাহকারীরা যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে যন্ত্র দেয় পরে কৃষকরা সে অনুযায়ী বিক্রয়োত্তর সেবা পান না এবং খুচরা যন্ত্রাংশও সহজলভ্য নয়।
‘মাটি ও জমির উপযোগী কৃষিযন্ত্র কৃষকদের সরবরাহ করতে হবে। যন্ত্র ব্যবহারকালে সৃষ্ট সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে বিক্রয়োত্তর গ্যারান্টি দিতে হবে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছি,’ যোগ করেন তিনি।
যন্ত্র ক্রয়ে যাতে স্বচ্ছতা থাকে সে জন্য ভর্তুকি সমন্বয় কমিটিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি রাখা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ভর্তুকি কারিগরি কমিটি ও ভর্তুকি বাজার দর যাচাই কমিটিতে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের প্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
গত বোরো মৌসুমে দেশের কৃষকরা ধান চাষ করে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হন। মণ প্রতি তাদের ক্ষতি হয় প্রায় ৩০০ টাকা। ধানের ন্যায্য মূল্যের দাবিতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় কৃষকরা নানাভাবে প্রতিবাদ জানান। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও এ প্রতিবাদে যোগ দেন।
খাদ্যগুদাম নির্মাণ
মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া দূর করতে সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী বলেন, মাঠ পর্যায়ের কৃষক ও খামারিরা যাতে তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায় সে বিষয়ে সরকার কাজ করছে। ‘তারা যাতে পণ্য সংরক্ষণ করতে পারে সে জন্য আমরা যথেষ্ট পরিমাণ গুদাম করার উদ্যোগ নিচ্ছি। বর্তমানে দেশে চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণ গুদাম নেই।’
আবদুর রাজ্জাকের মতে, কৃষক বা খামারি পণ্য সরাসরি বাজারে নিতে পারলে বেশি লাভবান হতেন। কিন্তু তারা মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে কম মূল্যে পণ্য বিক্রি করে দেয়ায় লাভ পাচ্ছেন না। অনেক কৃষক পণ্য বাজারে নেয়া ঝামেলা মনে করেন। তারা বাড়ি বা খামার থেকেই পণ্য বিক্রি করে ফেলছেন। এছাড়া, তাড়াহুড়া না করে সময় নিয়ে বিক্রয় করা হলে কৃষিপণ্যে মূল্য বেশি পাওয়া যায়। সেই সাথে অনেক জায়গায় যোগাযোগ ব্যবস্থা দুর্বল হওয়ার কারণে পণ্য যথা সময়ে বাজারে নেয়া যায় না। ফলে কৃষক বা খামারি কম মূল্যে তা বিক্রি করে দেন।
‘কৃষিপণ্য যাতে মাঠ পর্যায়ে সংরক্ষণ করে রাখা যায় সে উদ্যোগ আমরা নেব। পর্যাপ্ত পরিমাণ গুদাম করা হবে। তখন কৃষক পণ্য সংরক্ষণ ও সঠিক মূল্য পাবেন,’ যোগ করেন মন্ত্রী।
কৃষির বাণিজ্যিকীকরণ
কৃষির বাণিজ্যিকীকরণ করা এখন সরকারের মূল লক্ষ্য জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘এ লক্ষ্য পূরণে সরকার কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা করবে। তার পাশাপাশি কৃষি যান্ত্রিকীকরণ করা হবে।’
কৃষকরা গতবার ধানের সঠিক মূল্য পায়নি জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার কৃষকদের লাভবান করতে উৎপাদিত চালের অতিরিক্ত অংশ রপ্তানি করার ব্যবস্থা নিয়েছে এবং কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান ক্রয় করছে। ‘আগামীতে যেন এমন না হয় তার জন্য আমরা আগে থেকেই ব্যবস্থা নেব।’